
প্রশ্ন ১।
শেয়ালদা স্টেশনে আসিয়া খাম খুলিয়া নােটগুলি কী ভাবিয়া একবার দেখিয়া লইতে গিয়া হরিপদ মাথা ঘুরিয়া সেখানে বসিয়া পড়িল।… সর্বনাশ! সব কখানাই একশাে টাকার নােট, সর্বসুদ্ধ এগারাে খানা। চল্লিশ টাকার জায়গায় এগারশাে টাকা। টাকা ফেরত দেওয়ার একটা প্রধান বাধা দাঁড়াইয়াছে হরিপদর স্ত্রী। সে যেদিন হইতে শুনিয়াছে স্বামী টাকা ফেরত দেওয়ার সংকল্প করিতেছে, সেদিন হইতে সে কাঁদিয়া-কাটিয়া অনর্থ বাধাইয়াছে। হরিপদ তাহাকে বুঝাইয়া বলিল- দ্যাখাে, ফকির টাকা তাে… ওটা তাদের দিয়েই |
[তথ্যসূত্র : বড়বাবুর বাহাদুরি- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়]
ক. ‘সততার পুরস্কার গল্পে কৃতজ্ঞ ব্যক্তি কে?
খ. সকলে। যে আমাকে বড় ঘৃণা করে’- কথাটি কেন?
গ. উদ্দীপকের হরিপদ সততার পুরষ্কার গল্পের কোন লােকটিকে নির্দেশ করে?
ঘ. হরিপদর স্ত্রী ও আলােচ্য গল্পের অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিরা একে অনন্যর পরিপূরক মন্তব্যটি বিচার কর।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। ‘সততার পুরষ্কার’ গল্পে কৃতজ্ঞ ব্যক্তি অন্ধ লােকটি।
খ। ধবলরােগী ফেরেশতার কাছে তার রােগের কথা বলতে গিয়ে উক্ত কথাটি বলে।
আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতা ধবলরােগীর কাছে গিয়ে জানতে চান সে কী সবচেয়ে ভালােবাসে। জবাবে সে বলে তার গায়ের ধবল রােগ যদি ভালাে হয় তবে সে সবচেয়ে সুখী হবে। কারণ এই রােগকে সবাই খুব ঘৃণা করে।
গ। উদ্দীপকের হরিপদ ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধ সৎ লােকটিকে নির্দেশ করে।
মানুষের অন্যতম গুণগুলোর মধ্যে একটি হলাে সততা। সৎ ব্যক্তিকে সকলে ভালােবাসে। সৎ ব্যক্তি কখনাে কারও সঙ্গে অন্যায় করে না।
উদ্দীপকের হরিপদ একজন দরিদ্র ব্যক্তি। কোনাে এক অফিস থেকে সে তার প্রাপ্য টাকা পায়। টাকাটি তারা খামে ভরে হরিপদকে দেয়। স্টেশনে এসে হরিপদ খাম খুলে দেখে তার পাওনা চল্লিশ টাকা নয়। এত টাকার মালিক সে নয়। স্ত্রী বাধা দিলে হরিপদ তাকে বােঝাতে চেষ্টা করে। সততার পুরস্কার গল্পের অন্ধ লােকটিও সৎ। অন্ধ লােকটি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণে রেখেছে এবং ফেরেশতাকে সাহায্য করেছে। তাই বলা যায় যে, সৎ হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের হরিপদ আলােচ্য গল্পের অন্ধ সৎ লােকটিকে নির্দেশ করে।
ঘ। হরিপদর স্ত্রী ও আলােচ্য গল্পের অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিরা একে অন্যের পরিপূরক মন্তব্যটি যথার্থ।
অসৎ ব্যক্তি দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। সে শুধু তার নিজের কথাই চিন্তা করে। নিজের লাভের জন্য অন্যের ক্ষতি করতেও সে পিছপা হয় না।
উদ্দীপকে হরিপদর সততার কথা প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে প্রকাশ পেয়েছে তার স্ত্রীর অসৎ আচরণ হরিপদ তার প্রাপ্য চল্লিশ টাকার জায়গায় এগারােশ টাকা পেলে সে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে চায়। কিন্তু তার স্ত্রী তা দিতে নারাজ। তার স্ত্রী চায় সেই টাকা তাদের কাছে থাকুক। অন্যদিকে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পে এমনই দুজন ‘অসৎ ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে যারা আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করেও তা অস্বীকার করেছে। ধবলরােগী ও টাকওয়ালা ব্যক্তি দুজন অসৎ ও অকৃতজ্ঞ।
উদ্দীপকের হরিপদের স্ত্রী এবং সততার পুরস্কার’ গল্পের ধবলরােগী ও টাকওয়ালা অসৎ ও লােভী। এরা স্বার্থপর ও স্বার্থান্ধ। নিজেদের স্বার্থ ছাড়া এরা অন্যের কথা চিন্তা করে না। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন ২।
বিষন্ন মনে আলী আবার নাজিমের কাছে গিয়ে মােহরগুলাে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরােধ করল। নাজিম বিস্ময়ের ভান করে বলল, সে কী বন্ধু তুমি আমার কাছে জলপাই রেখে গেলে। এখন মােহর চাচ্ছ, ব্যাপার কী? আলী তখন বন্ধুর নিকট পুরাে ঘটনা খুলে বলল এবং মােহরগুলাে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার তাকে অনুরােধ করল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলাে না। বহু অনুনয় করা সত্ত্বেও মােহরগুলাে ফিরিয়ে দিতে নাজিম রাজি হলাে না। অগত্যা আলী কাজির দরবারে গিয়ে নালিশ জানাল।কাজির তলবে নাজিম বিচারালয়ে হাজির হলাে। কাজি প্রশ্ন করলেন, তুমি আলীর গচ্ছিত কলসিটি ফিরিয়ে দিলে, ওর ভিতরের মােহরগুলাে দিচ্ছ না কেন? ‘ [তথ্যসূত্র : কিশোর কাজি- (আরব্য উপন্যাস অবলম্বনে)]
ক. ফেরেশতা কিসের রূপ ধরে এসেছিলেন?
খ. “তবে তুমি যেমন ছিলে আল্লাহ আবার তােমাকে তাহাই করিবেন”- একথা কেন বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের নাজিমের সঙ্গে ‘সততার পুরষ্কার গল্পের কোন চরিত্রের বৈসাদৃশ্য রয়েছে ব্যাখ্যা কর।
ঘ.“উদ্দীপকটি ‘সততার পুরস্কার গল্পের মূলভাবের ধারক নয়।”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক। ফেরেশতা মানুষের রূপ ধরে এসেছিলেন।
খ। স্বর্গীয় দূত পুনরায় এলে যখন তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তখন স্বর্গীয় দূত প্রশ্নোক্ত মন্তব্য করেছেন।
আরব দেশে তিনজন লােক ছিল। যাদের মধ্যে একজন ছিল ধবলরােগী, একজন টাকওয়ালা, আর একজন অন্ধ। একদিন আল্লাহর আদেশে ফেরেশতা তাদের কাছে গিয়ে তাদের সমস্যা দূর করে দেন এবং ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রথম জনকে উট, দ্বিতীয় জনকে গাভি এবং তৃতীয় জনকে ছাগল দেন। অনেকদিন পরে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফেরেশতা আবার তাদের কাছে ফিরে যান, তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। তখন ধবলরােগী ও টাকওয়ালা তাকে ফিরিয়ে দিলে তিনি এমন মন্তব্য করেন। কারণ তারা দুজন তাদের অতীত ভুলে গিয়ে বর্তমান জীবন নিয়ে অহংকারী।
গ। উদ্দীপকের নাজিমের সঙ্গে ‘সততার পুরষ্কার গল্পের অন্ধ ব্যক্তিটির বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
মানুষের মহৎ গুণগুলাের মধ্যে সততা অন্যতম প্রধান গুণ। সৎ ব্যক্তিকে সবাই বিশ্বাস করে, ভালােবাসে। তাই সৎ মানুষের গ্রহণযােগ্যতা রয়েছে সবার কাছে। আর যারা অসৎ, মানুষ ঘৃণার চোখে দেখে।
উদ্দীপকের নাজিম একজন অসৎ ব্যক্তি। সে বন্ধুর গচ্ছিত আমানত ফেরত না দিয়ে অসততার পরিচয় দিয়েছে। অনেক অনুরােধ করার পরও সে বন্ধুর আমানত ফিরিয়ে দেয়নি। অন্যদিকে সততার পুরস্কার গল্পের অন্ধ ব্যক্তিটি মানুষরূপী ফেরেশতার কাছে আল্লাহর দয়ার কথা স্বীকার করেছে। এখানে আল্লাহর প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে। সেই সঙ্গে অতীত অবদানের কথা ভুলে না গিয়ে সে ফেরেশতাকে সাহায্য করতে চেয়েছে। উদ্দীপকের নাজিম ছিল অসৎ আর ‘সততার পুরষ্কার’ গল্পের অন্ধ ব্যক্তিটি ছিল সৎ। এ কারণেই উদ্দীপকের নাজিমের সঙ্গে আলােচ্য গল্পের নাজিমের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ। “উদ্দীপকটি সততার পুরস্কার গল্পের মূলভাবের ধারক নয়।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
সৎ ব্যক্তিকে সবাই পছন্দ করে। সৎ ব্যক্তির সঙ্গে সৌভাগ্য এবং আল্লাহর করুণা থাকে। অন্যদিকে অসৎ ব্যক্তিকে প্রত্যেক মানুষই ঘৃণা করে, তারা কখনই জীবনে উন্নতি করতে পারে না।
‘সততার পুরস্কার গল্পে লেখক সৎ ও অসৎ ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে উভয় কাজের পুরষ্কার ও পরিণতি বর্ণনা করেছেন। ধবলরােগী ও টাকওয়ালা আল্লাহ্র দানের কথা অস্বীকার করে অকৃতজ্ঞতা ও অসততার পরিচয় দিয়েছে। তাদের অসৎ আচরণের জন্য তারা শাস্তি পেয়েছে। অন্যদিকে সততার পরিচয় দিয়ে অন্ধ লােকটি পুরস্কার পেয়েছে। কারণ অন্ধ লােকটি কৃতজ্ঞচিত্তে আল্লাহর দানের কথা স্বীকার করেছে এবং অসহায়কে সাহায্য করেছে। অপরদিকে উদ্দীপকের নাজিম তার বন্ধুকে গচ্ছিত আমানত ফেরত না দিয়ে অসৎ আচরণের পরিচয় দিয়েছে। অনেক অনুরােধ করার পরও সে মােহরগুলাে ফিরিয়ে দেয়নি।
‘সততার পুরস্কার’ গল্পে লেখক সৎ এবং অসৎ ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে সততার শিক্ষণীয় বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। আর উদ্দীপকে নাজিমের আচরণে অসততার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে, যা ধবলরােগী ও টাকওয়ালার অসৎ আচরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। উদ্দীপকটি তাই আলােচ্য গল্পের মূলভাবের ধারক হয়ে উঠতে পারেনি। এসব বিচারে বলা যায়, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন ৩।
খলিফা মামুনের সময়কালে দামেস্কের জনৈক শাসনকর্তা পদচ্যুত হন। নতুন শাসনকর্তা মামুনের একজন প্রিয়পাত্র ছিলেন আলী ইবনে আব্বাস। তিনি স্থানীয় একজন সম্রান্ত ব্যক্তির কাছে আশ্রয় লাভ করে জীবন রক্ষা করেন। পরবর্তীকালে আলী ইবনে আব্বাসের আশ্রয়দাতা ঐ সম্ভান্ত ব্যক্তিটি খলিফা মামুনের সৈন্যদল কর্তৃক বন্দি হন এবং খলিফার নির্দেশে আলী ইবনে আব্বাসের গৃহে তাকে অন্তরীণ করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আলী ইবনে আব্বাস বন্দি ব্যক্তির সঠিক পরিচয় জানতে পেরে উপকারীর উপকারের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি গ্রহণ করেন এবং খলিফার কাছে তার মুক্তির জন্য সুপারিশ করেন। | [তথ্যসূত্র : পাঠ পরিচিতি প্রত্যুপকার (৯ম শ্রেণি)]
ক. স্বর্গীয় দূত সবশেযে কার কাছে গিয়েছিলেন?
খ. স্বর্গীয় দূত কেন পুনরায় তাদের কাছে গিয়েছিলেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সততার পুরস্কার গল্পের কোন দিকটির মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সততার পুরস্কার গল্পের মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট আলাদা।”- তােমার মতামত ব্যক্ত কর।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। স্বর্গীয় দূত সবশেষে অন্ধ লােকটির কাছে গিয়েছিলেন।
খ। স্বর্গীয় দূত পরীক্ষা করার জন্য পুনরায় তাদের কাছে গিয়েছিলেন।
সেকালে আরব দেশে একজন ধবলরােগী, একজন টাকওয়ালা এবং একজন অন্ধলােক ছিল। এই শারীরিক ত্রুটির জন্য তাদের মনে দুঃখের অন্ত ছিল না। আল্লাহর হুকুমে তাদের কাছে ফেরেশতা বা স্বর্গীয় দূত এসে তাদের সমস্ত দুঃখ লাঘব করে দেন এবং তিনজনকে তিনটি প্রাণী দেন। যা দিয়ে তারা তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটায়। কিছুদিন পর পরীক্ষা করার জন্য পুনরায় তাদের কাছে স্বর্গীয় দূত গিয়েছিলেন।
গ। উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের প্রতিদানের দিক দিয়ে মিল রয়েছে।
মানুষের জীবনে যেকোনাে সময়ে বিপদ-আপদ আসতে পারে এবং সে অসহায় অবস্থায় পড়তে পারে। তখন আল্লাহ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন বিভিন্ন রূপে। কিন্তু মানুষ অনেক সময় সেই সাহায্যের কথা ভুলে যায়। আর তার ফলেই পুনরায় তার জীবনে বিপত্তি নেমে আসে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, খলিফা মামুনের প্রিয়পাত্র আলী ইবনে আব্বাস একবার এক সম্ভান্ত ব্যক্তির কাছে আশ্রয় পান এবং তার জীবন রক্ষা হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি যখন ঐ ব্যক্তিকে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় পান তখন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে বাঁচানাের চেষ্টা করেন। সততার পুরস্কার গল্পে তিনজন লােককে স্বর্গীয় দূত এসে সুস্থ করেন এবং ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য তিনজনকে তিন ধরনের প্রাণী দিয়ে যান। কিছুদিন পরে স্বর্গীয় দূত তাদের কাছে পুনরায় আসেন তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। কিন্তু দুজন তাদের পূর্ব অবস্থার কথা ভুলে গেলেও শেষ ব্যক্তি নিজের আগের অবস্থার কথা মনে রেখে স্বর্গীয় দূতের চাহিদামতাে তাকে সবকিছু দেয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সাথে গল্পের প্রতিদানের দিক দিয়ে মিল রয়েছে।
ঘ। “উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সততার পুরষ্কার গল্পের মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট আলাদা।”- মন্তব্যটি সার্থক।
মানুষের জীবনে সমস্যা যেমন আছে, তার সমাধানও তেমনই আছে। তাই কোনাে সমস্যা হলে হাল না ছেড়ে দিয়ে ধৈর্য আর সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভরসা রেখে এগিয়ে যেতে হয়। কারণ সব সমস্যা মােকাবিলা করেই মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়।
উদ্দীপকে আলী ইবনে আব্বাস তার প্রাণরক্ষাকারী ব্যক্তিকে পরবর্তীতে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় দেখে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে বাঁচানাের চেষ্টা করেন। এখানে তার কৃতজ্ঞতার দিকটি ফুটে উঠেছে। ‘সততার পুরস্কার গন্ধে তিনজন শারীরিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ মানুষকে স্বর্গীয় দূত সুস্থ করে দেন এবং তাদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য তিনটি প্রাণী দিয়ে যান।
কিছুদিন পর স্বর্গীয় দূত তাদের পরীক্ষা করার জন্য ফিরে এলে তিনজনের মধ্যে প্রথম দুজন তাকে ফিরিয়ে দিলেও তৃতীয় জন তাকে সাহায্য করে।
উদ্দীপকে আলী ইবনে আব্বাস নিজের বিবেক থেকেই উপকারী ব্যক্তিকে সাহায্য করেছেন। অন্যদিকে গল্পের তিনজন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে এবং তৃতীয়জন পরীক্ষা সম্পর্কে না জানলেও নিজের অতীত মনে করে স্বর্গীয় দূতকে সাহায্য করেছে। তাই বলা যায়, উপকারের প্রতিদান দেওয়ার বিষয়ে উদ্দীপক ও গল্পের মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট আলাদা। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে সার্থক বলা যায়।
প্রশ্ন ৪।
এক তাঁতির একটি কাপড়ের দোকান ছিল। একদিন জরুরি কাজে তিনি দোকানের বাইরে গেলেন, দোকানের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন করিম বখ্শ নামের এক ছেলেকে। নানা দুর্বিপাকে পড়ে দোকানি দীর্ঘদিন ফিরে আসতে পারলেন না। করিম সততার সাথে কাজ করে দোকানের অনেক উন্নতি করল। ক্ৰষে এক দোকানের পরিবর্তে তিনটি দোকান স্থাপিত হল। প্রায় সাত বছর পরে হঠাৎ দোকানি ফিলে এলেন। করিম সাদরে তাকে বরণ করে দোকানের দায়িত্ব তার হাতে তুলে দিতে আগ্রহী হল। করিমের মহৎপ্রাণের পরিচয় পেয়ে বৃদ্ধ দোকানি অভিভূত হলেন। নিজের জন্য একটা মাসিক বন্দোবস্ত করে, করিমের হাতেই দোকান বুঝিয়ে দিয়ে তিনি তীর্থে চলে গেলেন। বালক তার সততার পুরস্কার পেল। [তথ্যসূত্র : বালকের সততা- মােহাম্মদ লুৎফর রহমান]
ক. ফেরেশতারা কার হুকুমে কাজ করেন?
খ. ফেরেশতা টাকওয়ালার মাথায় কেন হাত বুলিয়ে দিলেন?
গ. উদ্দীপকের করিমের সাথে ‘সততার পুরস্কার গল্পের কার সাদৃশ্য রয়েছে?
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সততার পুরষ্কার গল্পের মূলভাবের ধারক।”- মন্তব্যটি যথার্থতা নিরূপণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক।ফেরেশতারা আল্লাহর হুকুমে কাজ করেন।
খ। টাকওয়ালার মাথায় চুল গজানাের জন্য ফেরেশতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
আল্লাহর হুকুমে জনৈক ফেরেশতা টাকওয়ালার কাছে গেলেন। ফেরেশতা জানতে চাইলেন সে কী সবচেয়ে বেশি ভালােবাসে। জবাবে টাকওয়ালা তার টাক সেরে গিয়ে মাথায় চুল গজানাের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। ফেরেশতা তখন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এতে তার টাক সেরে যায়। তার মাথায় চুল গজিয়ে ওঠে।
গ। উদ্দীপকের করিমের সাথে ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের অন্ধ লােকটির সাদৃশ্য রয়েছে।
সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। সৎ ব্যক্তিকে সবাইকে বিশ্বাস করেন ভালােবাসেন। আল্লাহর করুণাও তার ওপর বর্ষিত হয়। সৌভাগ্য সবসময় তার সাথে থাকে।
উদ্দীপকের করিম একজন সৎ ছেলে। এক ব্যবসায়ী বিশ্বাস করে তার ওপর দোকানের সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে যান। দুর্বিপাকে পড়ে তিনি সময়মতাে আসতে না পারলেও করিম সততার সাথে তার ব্যবসায় দেখাশােনা করে এবং লােকটি ফিরে এলে তাকে তার আমানত ফিরিয়ে দিতে চায়। ‘সততার পুরস্কার গল্পের অন্ধ লােকটিও আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ রাখে এবং ফকিরবেশী ফেরেশতা তাকে.সাহায্য করতে চায়। এই সৎ ব্যক্তির সাথেই উদ্দীপকের করিমের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ। “উদ্দীপকটি সততার পুরস্কার’ গল্পের মূলভাবের ধারক।” মন্তব্যটি যথার্থ।
মানুষের বিভিন্ন গুণের মধ্যে সততা অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। যিনি সততার সাথে কাজ করেন তিনি জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন। তিনি মানুষের ভালােবাসা এবং সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ পান।
উদ্দীপকে সততার পুরস্কার সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। করিম নামের এক বালককে এক ব্যবসায়ী দোকানের দায়িত্ব দিয়ে বাইরে যান এবং নানা দুর্বিপাকে পড়ে সময়মতাে তিনি ফিরতে পারেন না। করিম সততার সাথে দীর্ঘদিন দোকান পরিচালনা করে এবং ব্যবসায়ী ফিরে এলে তাকে তার ব্যবসায় ফিরিয়ে দিতে চায়। ব্যবসায়ী করিমের সততায় মুগ্ধ হয়ে সবকিছু তাকে দিয়ে তার সততার পুরস্কার দেন। ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের মূলভাবও একই ধরনের।
‘সততার পুরষ্কার গল্পে দেখা যায় আরব দেশে তিনজন লােককে পরীক্ষার জন্য আল্লাহ ফেরেশতা প্রেরণ করেন। তাদের মধ্যে ধবলরােগী ও টাকওয়ালা সততার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও অন্ধ লােকটি সততার পরিচয় দেয়। অপর দুজন তাদের লােভ ও অকৃতজ্ঞতার শাস্তি পায় এবং অন্ধ লােকটি তার সততার পুরষ্কার পায়। গল্পের এই মূলভাবটিই উদ্দীপকটি ধারণ করেছে।
প্রশ্ন ৫।
খলিফা হারুন-অর-রশীদের শাসনকালে বাগদাদে আলী কোজাই নামে এক বণিক বাস করত। সে হজব্রত পালনের জন্য মক্কায় যাওয়ার সময় তার সারাজীবনের সঞয় একটি কলসিতে লুকিয়ে তার বন্ধু নাজিমের কাছে রেখে যায়। কলসির নিচে মােহর লুকিয়ে উপরে জলপাই দিয়ে তা ঢেকে রাখে এবং বন্ধুকে জলপাই কলসি বলেই উল্লেখ করে। অনেকদিন হয় বন্ধু ফিরে না-আসায় নাজিম খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে। এর মধ্যে একদিন তার স্ত্রী জলপাই খেতে চাইলে সে বন্ধুর কলসি থেকে জলপাই এনে দিতে যায় এবং ভাবে পরে নতুন জলপাই কিনে কলসিতে রেখে দিবে।
জলপাই আনতে গিয়ে সে দেখে কলসির নিচে সােনার মােহর। তার মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি আসল। সে সব সােনার মােহর নিয়ে সিন্দুকে লুকিয়ে রাখল এবং কলসি নতুন জলপাই দিয়ে ভরে রাখল। কয়েকদিন পর আলী কোজাই ফিরে এসে নাজিমের কাছ থেকে কলসি নিয়ে গেল। বাড়িতে গিয়ে সে দেখে সােনার মােহর নেই। সে নাজিমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে যে মােহরের ব্যাপারে কিছুই জানে না। তথ্যসূত্র : কিশাের কাজী আরব্য উপন্যাস অবলম্বনে
ক. টাকওয়ালা ফেরেশতার কাছে কী চাইল?
খ. ফেরেশতা ধবলরােগীর কাছে উট চাইলেন কেন?
গ. উদ্দীপকের নাজিমের সাথে ‘সততার পুরস্কার গল্পের ধবলরােগীর সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের একটি বিশেষ দিকের প্রতি ইঙ্গিত করেছে সম্পূর্ণ ভাবের ধারক হতে পারেনি মন্তব্যটি বিচার কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক। টাকওয়ালা ফেরেশতার কাছে একটি গাভী চাইল।
খ। ধবলরােগীর সততা গ্রীক্ষা করার জন্য ফেরেশতা তার কাছে উট চাইলেন।
আল্লাহর অনুগ্রহে রােগ ভালাে হয়ে যাওয়ার পর ধবলরােগী প্রচুর সম্পদের মালিক হয়। ফেরেশতা তার সততা পরীক্ষা করার জন্য পথিক হয়ে তার কাছে গিয়ে আল্লাহর দোহাই দিয়ে একটি উট চাইলেন, যাতে সেটা বিক্রি করে তিনি দেশে ফিরতে পারেন। কিন্তু ধবলরােগী আল্লাহর অনুগ্রহের কথা অস্বীকার করে উট দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফেরেশতা তখন তাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন।
গ। লােভ, অসততা এবং অকৃতজ্ঞতার দিক দিয়ে ধবলরােগীর সাথে উদ্দীপকের নাজিমের সাদৃশ্য রয়েছে।
লােভ মানুষের প্রধান শত্রু। লােভের বশবর্তী হয়ে মানুষ অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়, যার পরিণতি হয় ভয়াবহ। লােভ মানুষকে অসৎ হতে বাধ্য করে।
উদ্দীপকের নাজিম একজন ‘লােভী ও অসৎ ব্যক্তি। সে তার বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার মােহরগুলাে আত্মসাৎ করে। বন্ধু তার মােহরগুলাে ফিরে চাইলে সে তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
উদ্দীপকের নাজিমের মতাে সততার পুরস্কার’ গল্পের ধবলরােগীও অসৎ এবং লােভী। সে আল্লাহর অনুগ্রহে রােগমুক্ত হয় এবং সম্পদের মালিক হয়। কিন্তু মানুষরূপী ফেরেশতার কাছে তা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। ফলে তার অসততার শাস্তিস্বরূপ সে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। আল্লাহ্ তাকে আবার রােগাক্রান্ত ও নিঃস্ব করে দেন।
ঘ। উদ্দীপকটি সততার পুরস্কার’ গল্পের একটি বিশেষ দিকের প্রতি ইঙ্গিত করেছে মাত্র, সম্পূর্ণ ভাবের ধারক হতে পারেনি- মন্তব্যটি যথার্থ।
যারা সৎ তারা সবসময়ই আল্লাহর কৃপাদৃষ্টি লাভ করেন। মানুষও তাদের ভালােবাসে। কিন্তু যারা অসৎ তারা কখনই জীবনের লক্ষ্যে পৌছতে পারে না। কোনাে না কোনাে সময় তারা শাস্তি পায়।
উদ্দীপকে নাজিম নামের এক ব্যক্তির লােভ ও অসততার কথা বলা হয়েছে। সে তার বন্ধুর সম্পদ আত্মসাৎ করে। বিশ্বাসের মর্যাদা না দিয়ে বন্ধুর সম্পদ ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনাটি ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের ধবলরােগী ও টাকওয়ালার লােভ ও অসততার প্রতি ইঙ্গিত করেছে, কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবের ধারক হতে পারেনি।
সততার পুরস্কার গল্পে দেখা যায়, তিনজন ব্যক্তিকে পরীক্ষার জন্য আল্লাহ্ ফেরেশতাকে পাঠান। তাদের মধ্যে ধবলরােগী ও টাকওয়ালা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও অন্ধ ব্যক্তি দারুণ সততার পরিচয় দেয়। সে আল্লাহর দয়ার কথা স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আল্লাহ্ অপর দুজনকে শাস্তি দিলেও অন্ধ ব্যক্তির সততার জন্য তাকে পুরষ্কৃত করেন। এসব বিষয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ।